সাদকায়ে জারিয়া হলো এমন এক কর্ম যা দীর্ঘকাল -এমন কি অনন্ত অসীম কাল অবধি বান্দাহর নেকীর খাতায় ছওয়াবের অংক বাড়াতে থাকে। অপর দিকে গুনাহে জারিয়া হলো এমন এক বদকর্ম যা অনন্ত অসীম কাল অবধি লাগাতর বৃদ্ধি ঘটায় ব্যক্তির পাপের খাতায়। সাদকায়ে জারিয়ার শ্রেণী ভেদ আছে। সবচেয়ে বড় সাদকায়ে জারিয়া তো তাই যা মানব সমাজের সবচেয়ে বড় কল্যাণটি গড়ে। সবচেয়ে বড় গুনাহে জারিয়া হলো যা মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় অকল্যাণটি করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়া, গাছ লাগানো, রাস্তা নির্মাণ বা কাউকে ঘর বানিয়ে দেয়া সাদকায়ে জারিয়া। কিন্তু তাতে মানুষের সবচেয়ে কল্যাণটি হয় না। সেগুলি জাহান্নামের আগুণ থেকে রক্ষা করে না। সে বিচারে সবচেয়ে বড় সাদকায়ে জারিয়া হলো ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণ। কারণ এমন রাষ্ট্র জনগণকে জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতে নেয়ার কাজ করে। ইসলামী রাষ্ট্রের হাতে থাকে মানুষকে ঈমানদার তথা জান্নাতমুখি বানানোর শক্তিশালী হাতিয়ার। সেগুলি হলো রাজনৈতিক নেতৃত্বের পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালিত শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, আইন-আদালত, পুলিশ, প্রশাসন, প্রচারযন্ত্র ইত্যাদী। এসব প্রতিষ্ঠানের কারণে রাষ্ট্র পরিণত হয় মানুষকে আল্লাহভীরু মুত্তাকী বানানোর সোসাল ইঞ্জিনীয়ারিংয়ের শক্তিশালী মাধ্যম। রাষ্ট্র তখন কোটি কোটি মানুষকে জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতে নেয়। এমন রাষ্ট্র কাজ করে মানুষকে জান্নাতে নেয়ার বাহন রূপে। ইসলামে তাই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত নয়। মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণও নয়। সেটি হলো ইসলামী রাষ্ট্র নির্মানের জিহাদ। এ মহান কাজ শুধু অর্থ, সময়, মেধা ও শ্রমের বিনিয়োগ চায় না, চায় জানের কোরবানী। এ জিহাদে যারা শহীদ হয় তাদের জন্য রয়েছে বিনা হিসাবে জান্নাতপ্রাপ্তি। মহান নবীজী (সাঃ)র নিজে এমন একটি মহান কল্যাণকর রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা দিয়ে তাঁর উম্মতদের সামনে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। সে রাষ্ট্রের বরকতেই এ যাবত বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ জান্নাতের পথে চলার সুযোগ পেয়েছে। এর চেয়ে বড় কল্যাণকর কাজ আর কি হতে পারে? তাই সবচেয়ে বড় সাদকায়ে জারিয়া হলো এমন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় যেমন শ্রম, মেধা ও অর্থ বিনিয়োগ, তেমনি রক্ত তথা জানের বিনিয়োগ। নবীজী (সাঃ)র সাহাবাদের দ্বারা সবচেয়ে বড় বিনিয়োগটি হয়েছিল এ খাতে। শতকরা ৭০ জনের বেশী সাহাবা শহীদ হয়েছেন। তাদের সে সাদাকায়ে জারিয়ার বরকতে আমরা আজ মুসলিম। ফলে আমাদের এবং আমাদের পরবর্তীদের প্রতিটি নেককর্মের ছওয়াবে অংশ তারাও পাবে। অথচ আজকের মুসলিমদের অতি গুরুত্বপূর্ণ এ সাদকায়ে জারিয়াতে কোন আগ্রহ নেই। জান ও মালের কোরবানী দূরে থাক, এমন রাষ্ট্রের দাবী নিয়ে রাস্তায় মিছিল করতে বা ভোট দিতেও তারা রাজী নয়। অপর দিকে সবচেয়ে বড় গুনাহে জারিয়া বেশ্যালয়, নাচ-গানের স্কুল, মদের কারখানা, জুয়ার আড্ডা বা সূদী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা দেয়া নয়, বরং সেটি হলো ইসলামবিরোধী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা দেয়া। তখন রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব, প্রচার মাধ্যম, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থা কাজ করে জনগণকে জাহান্নামের পথে নিতে। অসম্ভব করে শরিয়ত পালন তথা পূর্ণ মুসলিম হওয়া। তখন দেশের মানুষ জড়িত হয়ে পড়ে নেক কর্মের বদলে গুম-খুন-ধর্ষণের ন্যায় নানা রূপ অপরাধ কর্মে। এভাবে রাষ্ট্র সুযোগ করে দেয় জনগণকে জাহান্নামের উপযোগী হয়ে গড়ে উঠতে। হাজার হাজার মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ে বা শত শত বই-পুস্তক লিখে এ বিশাল রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোর বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয়ী হওয়া যায় না। তাই এমন একটি অনৈসলামিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় ও প্রতিরক্ষায় অর্থ, শ্রম, মেধা এবং রক্তের বিনিয়োগ হলো সবচেয়ে বড় গুনাহে জারিয়া। পরিতাপের বিষয় হলো, অধিকাংশ মুসলিম দেশের মুসলিমদের বিনিয়োগ তো এ গুনাহে জারিয়াতেই। ফলে ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছে মূলতঃ তারাই।
Leave a Reply